সৎ ব্যবসায়ী শেষ বিচারে নবী, সিদ্দিকিন ও শহীদের সাথে থাকবে

Daily Inqilab এইচ এম গোলাম কিবরিয়া (রাকিব)

২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

সাধারণভাবে উর্পাজনের অনেক প্রকার থাকতে পারে। তবে মৌলিক দিক থেকে মানুষের উর্পাজনকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। ক. বৈধ পন্থায় উপার্জন খ. অবৈধ পন্থায় উপার্জন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপনা করা হলো। বৈধ পন্থায় উপার্জনের জন্য আমরা সর্বদা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করি। কীভাবে আমরা আমাদের রিজিক বৈধ পন্থায় উপার্জন করতে পারি? কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অন্যতম শর্ত হলো বান্দার উপার্জন হালাল পন্থায় হওয়া। কেননা রিজিক যদি হালাল পন্থায় উপার্জিত না হয়, তাহলে তার কোনো দোয়া-ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দরবারে কবুল হয় না। আর আল্লাহ ও হালাল রিজিক দিয়ে জীবণধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেন, আমি তোমাদের জন্য যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু তোমরা ভক্ষণ কর। (২:৫৭)।

আর বৈধ পেশায় নিয়োজিত থেকে সম্পদ উপার্জনের জন্য পবিত্রতম ও হালাল বস্তুর খোজঁ করার নির্দেশও আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- হে মুমিনগণ ! জুমার দিন যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ত্রুয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও। যখন তারা দেখলো ব্যবসা ও কৌতুক, তখন তারা তোমাকে দাড়াঁন অবস্থায় রেখে তার দিকে ছুটে গেলো। বল! আল্লাহর নিকট যা আছে তা ত্রুীড়া-কৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা। (৬২:৯-১১)।

এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, খাওলাহ বিনতে কায়েস ইবনে কাহাদ রা. হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পৃথিবী মিষ্ট ও শ্যামল। এখানে যে ব্যক্তি হালাল সম্পদ উপার্জন করবে এবং ন্যয়সঙ্গত পথে তা ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে উওম প্রতিদান দেবেন এবং তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করবে এবং অন্যায় পথে ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে অপমানজনক স্থানে নির্বাসিত করবেন। আর হারাম সম্পদ হস্তগতকারী ব্যক্তিরা কেয়ামতের দিন আগুনে জ্বলবে। (সহি ইবনে হিব্বান : ৪৫১২)।

মানব সভ্যতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য পৃথিবীর শুরু থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানব সভ্যতার উন্নয়ন ও বিকাশে ব্যবসা-বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে কোনো না কোনোভাবে চলে আসছে। কেননা সীমিত সম্পদ দ্বারা মানুষ কখনোই তার বিভিন্নমুখী চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় নি। ফলে তখন হতে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদের বিভিন্ন প্রকারের উপযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলে আসছে। মানুষের এ প্রচেষ্টা থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎপত্তি। অন্যকথায়, মানুষের জীবনে অভাব অপরিসীম । অপরিসীম অভাব পূরণের জন্য মানুষ নানারকম অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। অভাববোধ ও অভাব পূরণের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎপত্তি।

ইসলামে আয়-উপার্জনের যতোগুলো মাধ্যম আছে. তার মধ্যে নিজের শারীরিক শ্রমলব্ধ আয় এবং ব্যবসায়ের সম্পদ উপার্জনের মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করে তা আহরণ করতে হয়্ আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলদের জন্য যেমন মান্না-সালওয়া নাজিল করতেন তেমনটি এ যুগে আর হওয়ার সম্ভবনা নেই। মুসলিম উম্মাহকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যম সম্পদ উপার্জনের শিক্ষা রাসুলুল্লাহ সা. দিয়েছেন। মাধ্যম অর্জিত আয়কে সর্বোত্তম বলা হয়েছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে ব্যবসা দুনিয়াবি কাজ হলেও যখন একজন মুসলিম মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে সততার সাথে জনকল্যাণ ও জনসেবার নিয়তে ব্যবসা করে তখন তা ইবাদতে পরিণত হয়। কোনো জাতির অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির নির্ভর করে সে জাতির ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ও অগ্রগতির উপর। যে জাতি বা রাষ্ট ব্যবসা বাণিজ্যে অমনোযোগী হয় তারা পরোমুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। এ ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ ধরেই উন্নত রাষ্টগুলো দ্বারা তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি এমনকি ধর্মীয় কার্যকলাপ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয়।

যে জাতির মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য নেই সে জাতি অবশ্যই আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে। যে দেশে ব্যবসা বাণিজ্য বরকত থেকে বঞ্চিত বর্তমানে না হলেও ভবিষ্যতে সে জালিম সরকারগুলোর শোষণ ও লুটতরাজের শিকার হয়ে বরবাদ হয়ে যাবে। এজন্যই ইসলাম ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের নির্দেশ দিয়েছে। তার ফজিলত ও বরকতের কথা শুনিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ব্যবসাকে দু’টি ভাগে করা যায়- এক, হালাল জিনিসের ব্যবসা দুই, হারাম জিনিসের ব্যবসা। যে ব্যবসার মধ্যে শঠতা, প্রতারণা, কপটতা, অবিশ্বসতা, ধোঁকা ও সুদী কারবার প্রভৃতি অসচ্চরিত্রের কোনো স্থান নেই, ইসলামে সেগুলো হালাল। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছ্ েহজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন- সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিকিন ও শহিদের সাথে থাকবে। (সুনানে তিরমিজি : ১২০৯)।

ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- যে ব্যক্তি ১০ দিরহাম দিয়ে কোনো কাপড় কিনলো এবং তার মধ্যে এক দিরহাম অসৎ উপায়ে অর্জিত, সে যতোদিন ঐ কাপড় পরিহিত থাকবে ততোদিন তার নামাজ কবুল হবে না।’


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টাইব্রেকারে রোনালদোর পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে ফ্রান্স

টাইব্রেকারে রোনালদোর পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে ফ্রান্স

৩৬ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল জার্মানির,রুদ্ধশ্বাস জয়ে সেমিতে স্পেন

৩৬ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল জার্মানির,রুদ্ধশ্বাস জয়ে সেমিতে স্পেন

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

লোক নাট্যদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

লোক নাট্যদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

১৩ বছর পর অভিনয়ে ফিরছেন মেহের আফরোজ শাওন

১৩ বছর পর অভিনয়ে ফিরছেন মেহের আফরোজ শাওন

মাধ্যমিক পর্যায়ে কোডিং শিক্ষা প্রসঙ্গে

মাধ্যমিক পর্যায়ে কোডিং শিক্ষা প্রসঙ্গে

প্রাকৃতিক রক্ষাব্যুহ সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

প্রাকৃতিক রক্ষাব্যুহ সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

অসত্য তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে বের হয়ে আসতে হবে

অসত্য তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে বের হয়ে আসতে হবে

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

পশ্চিম তীরে পাঁচ সহস্রাধিক নতুন আবাসন অনুমোদন নেতানিয়াহুর

পশ্চিম তীরে পাঁচ সহস্রাধিক নতুন আবাসন অনুমোদন নেতানিয়াহুর

হীরার গয়নায় শাস্তির মুখে বলসোনারো

হীরার গয়নায় শাস্তির মুখে বলসোনারো

ইসরাইলকে থামাতে হবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে : এরদোগান

ইসরাইলকে থামাতে হবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে : এরদোগান

মানুষের কামড়ে সাপের মৃত্যু

মানুষের কামড়ে সাপের মৃত্যু

রকেট হামলায় ইসরাইলি কোম্পানি কমান্ডার নিহত

রকেট হামলায় ইসরাইলি কোম্পানি কমান্ডার নিহত

ভোট দিয়ে যে আহ্বান জানালেন খামেনি

ভোট দিয়ে যে আহ্বান জানালেন খামেনি

যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকে জাপানের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকে জাপানের হুঁশিয়ারি

গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি

গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি

এসসিও’র শীর্ষ সম্মেলনে মোদি কেন গেলেন না

এসসিও’র শীর্ষ সম্মেলনে মোদি কেন গেলেন না

জিম্মি প্রশ্নে মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাবে ইসরাইল

জিম্মি প্রশ্নে মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাবে ইসরাইল